মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
মোঃ নুরুল করিম, কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের নতুন উপজেলা ঈদগাঁও গোমাতলীতে উপকূলীয় বনবিভাগের আওতাধীন প্রায় ২০০ একর ম্যানগ্রোভ বন দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে চিংড়ি ঘের। এক মাস ধরে প্যারাবন ধ্বংস করে এখানে বাঁধ তৈরি করছে দখলবাজ চক্র।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালী গোরাকঘাটা রেঞ্জের অধীন চৌফলদন্ডী বিট অফিসের আওতাধীন পোকখালী ৬ নম্বর স্লুইচ গেটস্থ হান্নান মিয়ার ঘোনা নামক ঘেরের পশ্চিমে প্রায় ২শ একর জায়গা দখল করে বাধ দিয়ে চারদিক ঘেরাও করে রেখেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এখানে কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার বাইন, কেওড়াসহ হরেক প্রজাতির গাছগাছালি। এতে পরিবেশ প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আবাসস্থল হারাচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে আশ্রয় নেয়া নানান প্রজাতির প্রাণী। গত এক মাস ধরে প্যারাবন ধ্বংসের এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দখলবাজদের ভয়ে এলাকার লোকজন কিছু বলার সাহস করে না। কেউ প্রতিবাদ করলেও এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হান্নান মিয়ার ঘোনার পশ্চিমে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মহেশখালী চ্যানেলের সাগরের একটু পূর্বে শত শত শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। চারপাশে পাহারায় রয়েছে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪০–৫০ জন যুবক। ঘটনাস্থল সাগরের পাশাপাশি হওয়ায় এবং দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হওয়ায় সহজে কেউ যেতে চায় না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সিন্ডিকেট সরকারি সম্পদ দখল করতে পারে না। ম্যানগ্রোভ অরণ্যে নানান প্রজাতির পশু, পাখি, প্রাণী ও গাছগাছালি রয়েছে। বন্যপ্রাণী, মৎস্য, পরিবেশ, জলাধার আইন লঙ্ঘন করে যারা এ সব ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে সকল শ্রেণির মানুষ এবং জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয় বিট কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল এবং কয়েকটি বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা। এ বিষয়ে জানতে ইউএনওকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক নুরুল আমিন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এখনো রিপোর্ট পেশ করেনি পরিদর্শন টিম। রিপোর্ট পাওয়ার পর পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।